দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এমন একটি অবস্থা যা ছয় মাস বা তার বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয় এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনে প্রভাব ফেলে। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, এবং এর সঠিক কারণ নির্ধারণ করা চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমরা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করব।

১. আর্থ্রাইটিস

আর্থ্রাইটিস

 

আর্থ্রাইটিস হল দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ। এটি সন্ধির প্রদাহজনিত একটি অবস্থা, যা সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে দেখা যায় তবে যেকোনো বয়সের লোকদেরও প্রভাবিত করতে পারে। আর্থ্রাইটিসের ফলে সন্ধিগুলি শক্ত হয়ে যায় এবং সেখানে ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। 

 

২. পিঠের সমস্যা

পিঠের সমস্যা

 

পিঠের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার অন্যতম সাধারণ কারণ। মেরুদণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন ডিস্ক প্রলাপস, স্লিপ ডিস্ক, এবং স্পাইনাল স্টেনোসিস, পিঠের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘক্ষণ সঠিকভাবে না বসা, ভারী বস্তু উত্তোলন, এবং অপর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপও পিঠের ব্যথা বাড়াতে পারে।

৩. নিউরোপ্যাথিক ব্যথা

নিউরোপ্যাথিক ব্যথা নার্ভের সমস্যার কারণে হয়। এটি সাধারণত ডায়াবেটিস, হেরপিস, ট্রমা বা কোনো সার্জারির পরে হতে পারে। নিউরোপ্যাথিক ব্যথা স্নায়ুর ক্ষতির কারণে হয় এবং এতে তীব্র ব্যথা ও জ্বালাযুক্ত অনুভূতি হতে পারে।

৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া

ফাইব্রোমায়ালজিয়া একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার অবস্থা যা পুরো শরীরে ব্যথা, ক্লান্তি, এবং মানসিক অবসাদ সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত মাংসপেশী ও স্নায়ুতে ব্যথা সৃষ্টি করে। মানসিক চাপ ও শারীরিক আঘাত ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ব্যথা বাড়াতে পারে।

৫. ক্যান্সার

ক্যান্সার এবং তার চিকিৎসা প্রক্রিয়ার কারণে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে, ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়লে এটি টিস্যু ও নার্ভে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে। ক্যান্সারের কারণে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা খুব তীব্র হতে পারে এবং নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

৬. মাইগ্রেন

মাইগ্রেন

 

মাইগ্রেন হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথার অবস্থা যা সাধারণত মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে। মাইগ্রেনের সাথে বমি বমি ভাব, আলো ও শব্দে সংবেদনশীলতা দেখা যায়। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যা নিয়মিত হতে পারে এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

৭. সায়াটিকা

সায়াটিকা একটি অবস্থা যেখানে সায়াটিক নার্ভে চাপ পড়ে, যা কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত ব্যথা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত লাম্বার ডিস্ক হের্নিয়েশন বা স্পাইনাল স্টেনোসিসের কারণে হয়। সায়াটিকার ব্যথা অনেক সময় তীব্র হতে পারে এবং হাঁটা-চলা কষ্টকর করতে পারে।

৮. ইন্ডোমেট্রিওসিস

ইন্ডোমেট্রিওসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণ, যা মূলত মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। ইন্ডোমেট্রিওসিসে জরায়ুর টিস্যু জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পায়, যা পেটের ব্যথা ও মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসা

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়। নিচে কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতির উল্লেখ করা হল:

১. মেডিকেশন

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উপশম করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস, পেইন কিলারস, এন্টিডিপ্রেসেন্টস, এবং নার্ভ ব্লকিং এজেন্টস দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

২. ফিজিক্যাল থেরাপি

ফিজিক্যাল থেরাপি বা শারীরিক থেরাপি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উপশম করার জন্য কার্যকর হতে পারে। শারীরিক ব্যায়াম, ম্যানুয়াল থেরাপি, এবং অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি পেশী ও সন্ধির স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যথা কমায়।

৩. মানসিক থেরাপি

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণে মানসিক অবস্থা খারাপ হতে পারে, যা ব্যথা বাড়াতে পারে। সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং, কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT), এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট মানসিক থেরাপির অন্তর্ভুক্ত। মানসিক থেরাপির মাধ্যমে রোগীকে ব্যথা মোকাবেলায় মানসিক সমর্থন প্রদান করা হয়।

৪. এক্যুপাংচার

এক্যুপাংচার একটি প্রাচীন চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি যা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উপশমে কার্যকর হতে পারে। এতে বিশেষ সূচ ব্যবহার করে শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টে চাপ সৃষ্টি করা হয়, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

৫. লাইফস্টাইল পরিবর্তন

সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

উপসংহার

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা একটি জটিল সমস্যা যার অনেক কারণ থাকতে পারে। এটি শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্টকর হতে পারে, তবে সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার কারণ নির্ধারণ করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত।

NHC Trust  যেকোনো ব্যথাই আক্রান্ত মানুষকে দ্রুত ব্যথা মুক্ত স্বনির্ভর জীবনের পথে নিয়ে যেতে সামর্থ্যের মধ্যেই অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি ও বায়ো ফিজিক্যাল থেরাপি ব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকে।

যোগাযোগ : 01931405986, 01910701955  

অথবা ভিজিট করুনঃ https://www.nhctrust.org/

 

Leave a Comment