ডায়াবেটিস মেলিটাস এর লক্ষণ: কারণ, ধরন ও প্রতিকার

ডায়াবেটিস মেলিটাস হল একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা শরীরে ইনসুলিন হরমোনের অভাব বা কার্যকারিতার অভাবে ঘটে। এটি মূলত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বর্তমানে এটি বিশ্বব্যাপী অন্যতম সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠেছে। এই আর্টিকেলে আমরা “ডায়াবেটিস মেলিটাস এর লক্ষণ” সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ডায়াবেটিস মেলিটাস কি?

ডায়াবেটিস মেলিটাস হল এমন একটি রোগ যেখানে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হলেও তা কার্যকরভাবে কাজ করে না। ইনসুলিন হরমোনের অভাবের ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে এই মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়।

ডায়াবেটিস মেলিটাসের ধরন

১. টাইপ ১ ডায়াবেটিস

  • এটি সাধারণত শিশু, কিশোর বা তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলো ধ্বংস করে ফেলে।
  • ইনসুলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস

  • এটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ধরনের ডায়াবেটিস।
  • শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, তবে তা সঠিকভাবে কাজ করে না।
  • অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৩. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

  • গর্ভাবস্থায় হরমোনজনিত কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়।
  • সন্তান জন্মের পর সাধারণত এটি সেরে যায়, তবে ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ডায়াবেটিস মেলিটাস এর লক্ষণ

ডায়াবেটিস মেলিটাসের কিছু প্রধান লক্ষণ রয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় উপেক্ষা করা হয়। নিচে উল্লেখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

১. অতিরিক্ত তৃষ্ণা (Polydipsia)

  • শরীরে ইনসুলিনের অভাব থাকলে রক্তে গ্লুকোজ জমা হয় এবং কিডনি তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে চায়।
  • ফলে শরীর অতিরিক্ত পানি হারায় এবং বারবার তৃষ্ণা লাগে।

 

২. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া (Polyuria)

 

  • রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকলে কিডনি তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়।
  • ফলে দিনে এবং রাতে অনেকবার প্রস্রাবের প্রয়োজন হয়।

৩. অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা (Polyphagia)

  • শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারলে কোষগুলো পর্যাপ্ত শক্তি পায় না।
  • এর ফলে মানুষ প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত অনুভব করে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

৪. ওজন হ্রাস

  • টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন না পেলে ফ্যাট ও পেশির প্রোটিন ভেঙে শক্তি তৈরি করে।
  • এর ফলে ওজন দ্রুত কমতে শুরু করে।

৫. ক্লান্তি ও অবসাদ

  • শরীর গ্লুকোজ থেকে পর্যাপ্ত শক্তি গ্রহণ করতে না পারলে সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভূত হয়।
  • দৈনন্দিন কাজ করতে গেলেও অবসাদ লাগে।

৬. ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া

  • ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং ক্ষত নিরাময়ের ক্ষমতা কমে যায়।
  • ফলে যেকোনো ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়া শুকাতে বেশি সময় লাগে।

৭. ঝাপসা দৃষ্টি

  • উচ্চ রক্তে শর্করার কারণে চোখের লেন্সে পানি জমে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যেতে পারে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করা হলে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি থাকে।

৮. হাত-পায়ে ঝিনঝিন বা অবশ লাগা

  • দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস থাকলে স্নায়ুতে ক্ষতি হতে পারে।
  • এর ফলে হাত ও পায়ে ঝিনঝিন অনুভূতি, জ্বালাপোড়া বা অবশ লাগতে পারে।

৯. বারবার সংক্রমণ হওয়া

  • ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ত্বক ও মূত্রনালির সংক্রমণ বেশি দেখা যায়।
  • ছত্রাকজনিত ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।

 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায়

ডায়াবেটিস মেলিটাস নিয়ন্ত্রণে কিছু কার্যকরী পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

  • চিনি ও উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • সবুজ শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।

২. নিয়মিত ব্যায়াম

  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন।
  • ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ

  • অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা কমানোর চেষ্টা করুন।
  • সুস্থ ওজন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৪. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা

  • নিয়মিত গ্লুকোমিটার ব্যবহার করে রক্তের গ্লুকোজ লেভেল পরীক্ষা করুন।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করুন।

৫. জীবনযাত্রার পরিবর্তন

  • ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দিন।

উপসংহার

ডায়াবেটিস মেলিটাসের লক্ষণগুলি প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। অবহেলা করলে এটি দীর্ঘমেয়াদে নানা জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। তবে সঠিক জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং প্রয়োজনীয় থেরাপি গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের নেতিবাচক প্রভাব অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

NHC Trust আধুনিক ফিজিওথেরাপি ও বায়ো ফিজিক্যাল থেরাপি ব্যবস্থার মাধ্যমে ডায়াবেটিসজনিত ব্যথা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করছে। ব্যথামুক্ত ও স্বনির্ভর জীবনের পথে এগিয়ে যেতে আমাদের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।

NHC Trust  ডায়াবেটিক পুনর্বাসন সম্পর্কিত সকল সেবা প্রদান করে থাকে।

বিস্তারিত জানতে ও পরামর্শ পেতে

 

যোগাযোগ: 01931405986, 01910701955
ভিজিট করুন: NHC Trust Website

 

 

Leave a Comment