পিঠে ব্যথা কি নিউরোপ্যাথির লক্ষণ?

পিঠে ব্যথা একটি সাধারণ অথচ অস্বস্তিকর সমস্যা, যা জীবনের কোনো না কোনো সময়ে প্রায় সবাইকেই ভোগায়। অনেকেই এটিকে শুধুমাত্র পেশির টান, অস্বাভাবিক ভঙ্গি বা ওজন বৃদ্ধির ফল মনে করলেও, অনেক ক্ষেত্রে পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে নিউরোপ্যাথি। প্রশ্ন আসে — পিঠে ব্যথা কি নিউরোপ্যাথির লক্ষণ? এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে এর উত্তর খুঁজব, পাশাপাশি কারণ, উপসর্গ, ও চিকিৎসা নিয়েও জানব।

 

নিউরোপ্যাথি কী?

নিউরোপ্যাথি হলো এক বা একাধিক স্নায়ুর ক্ষয় বা ব্যাধি, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, অবশভাব, দুর্বলতা বা অস্বাভাবিক অনুভূতি সৃষ্টি করে। এটি প্রধানত Peripheral Nervous System (PNS)-এ ঘটে, অর্থাৎ মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা স্নায়ুগুলোতে।

 

পিঠে ব্যথা কি নিউরোপ্যাথির লক্ষণ?

 হ্যাঁ, পিঠে ব্যথা নিউরোপ্যাথির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে। বিশেষত যখন ব্যথার সঙ্গে নিচের উপসর্গগুলো থাকে:

✅ ব্যথা পিঠ থেকে নিতম্ব বা পায়ে ছড়িয়ে পড়ে (Radiculopathy বা Sciatica)

✅ পায়ে অবশভাব বা সুচ ফোটার মতো অনুভব

✅ দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে ব্যথা বেড়ে যায়

✅ হাঁটা-চলার সময় ভারসাম্যহীনতা অনুভব

✅ স্পর্শে অতিসংবেদনশীলতা

এগুলো নির্দেশ করে, স্নায়ুর উপর চাপ বা ক্ষতি হয়েছে — যা নিউরোপ্যাথির আওতায় পড়ে।

 

পিঠের ব্যথার সাথে সম্পর্কিত নিউরোপ্যাথির ধরন

১. Radiculopathy:

মেরুদণ্ডের ডিস্ক যদি সরে যায় বা চাপ পড়ে, তাহলে তা আশেপাশের নার্ভে চেপে বসে। এই অবস্থাকেই বলে Radiculopathy, যা নিউরোপ্যাথিরই একটি রূপ।

২. Sciatica:

সায়াটিক নার্ভে চাপ পড়লে এটি হয়। পিঠ থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত ব্যথা, ঝিনঝিনি ভাব ও দুর্বলতা দেখা দেয়।

৩. Peripheral Neuropathy:

Peripheral Neuropathy

পিঠের নার্ভগুলোসহ শরীরের অন্য অংশেও ব্যথা বা অসাড়তা দেখা দিতে পারে।

 

নিউরোপ্যাথির পেছনে পিঠে ব্যথার কারণসমূহ

১. ডিস্ক স্লিপ (PLID):

ডিস্ক স্লিপ (PLID)

মেরুদণ্ডের মাঝের ডিস্ক যদি চেপে যায় বা বেরিয়ে আসে, তখন এটি নার্ভে চাপ সৃষ্টি করে এবং পিঠে ব্যথা ও নিউরোপ্যাথির লক্ষণ দেখা দেয়।

২. ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি:

ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এতে পিঠে, পায়ে বা হাতেও ব্যথা হতে পারে।

৩. আঘাত বা ট্রমা:

পিঠে আঘাত লাগলে স্পাইনাল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নিউরোপ্যাথি তৈরি হয়।

৪. সংক্রমণ বা প্রদাহ:

ভাইরাল সংক্রমণ (যেমন শিংলস) বা স্নায়ুতে প্রদাহ হলে নিউরোপ্যাথিক ব্যথা শুরু হয়।

৫. অতিরিক্ত ওজন ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:

অতিরিক্ত ওজন, ভুলভাবে বসা বা ভার তুললে স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে এবং দীর্ঘদিনে নিউরোপ্যাথি দেখা দেয়।

 

পিঠে নিউরোপ্যাথির লক্ষণগুলো:

✅ পিঠ থেকে পায়ে বা নিতম্বে ব্যথা ছড়ানো

✅ ব্যথা পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভব হওয়া

✅ রাতের বেলায় ব্যথা বেড়ে যাওয়া

✅ পায়ে দুর্বলতা, ভারসাম্য হারানো

✅ হাত-পায়ে অবশভাব, পিন ফোটার মত অনুভব

✅ শরীরের কিছু অংশে অনুভূতি হ্রাস পাওয়া

 

চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা:

 ১. সঠিক নির্ণয়:

MRI, Nerve Conduction Study (NCS), বা EMG এর মাধ্যমে স্নায়ুর সমস্যা নির্ণয় করা হয়।

 ২. ওষুধ:

Gabapentin, Pregabalin, Amitriptyline ইত্যাদি নিউরোপ্যাথিক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

 ৩. ফিজিওথেরাপি:

সঠিক ব্যায়াম ও থেরাপির মাধ্যমে পিঠের পেশি ও স্নায়ু রিল্যাক্স করানো যায়।

 ৪. বায়োফিজিক্যাল থেরাপি:

TENS, শকওয়েভ, লেজার থেরাপি ইত্যাদি নিউরোপ্যাথির আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়।

৫. জীবনধারা পরিবর্তন:

ওজন নিয়ন্ত্রণ, সঠিক বসার অভ্যাস, নিয়মিত হাঁটাহাঁটি নিউরোপ্যাথি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

 ৬. সার্জারি (যদি প্রয়োজন হয়):

PLID বা নার্ভ কমপ্রেশন গুরুতর হলে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।

 

কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি?

✅ ব্যথা এক মাসের বেশি সময় ধরে চলতে থাকলে

✅ পায়ে দুর্বলতা বা ভারসাম্য হারালে

✅ রাতে ঘুম নষ্ট হওয়া ব্যথার কারণে

✅ প্রস্রাব বা মল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হলে

 

উপসংহার:

পিঠে ব্যথা অনেক সময় সাধারণ মনে হলেও এটি যদি অবশভাব, পায়ে ব্যথা ছড়ানো বা দুর্বলতার সঙ্গে হয়, তাহলে সেটি নিউরোপ্যাথির লক্ষণ হতে পারে। নির্ভুল ও সময়মত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী বা জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই এমন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত স্নায়ু বিশেষজ্ঞ বা ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

NHC Trust  যেকোনো ব্যথাই আক্রান্ত মানুষকে দ্রুত ব্যথা মুক্ত স্বনির্ভর জীবনের পথে নিয়ে যেতে সামর্থ্যের মধ্যেই অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি ও বায়ো ফিজিক্যাল থেরাপি ব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকে।

যোগাযোগ : 01931405986, 01910701955  

অথবা ভিজিট করুনঃ https://www.nhctrust.org/contact-us/

 

NHC Trust – ফিজিওথেরাপি ও বায়োফিজিক্যাল থেরাপির আধুনিক সেবা

Leave a Comment