ফাইব্রোমায়ালজিয়া হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা এবং ক্লান্তির রোগ। এটি সাধারণত একটি সেনসিটিভ রোগ, যেখানে স্নায়ুর সমস্যা ও দেহের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভূত হয়। সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত জীবনযাপনের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রোমায়ালজিয়ার সাধারণ লক্ষণ
ফাইব্রোমায়ালজিয়ার লক্ষণগুলো বেশ বৈচিত্র্যময় হতে পারে এবং বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ভিন্নভাবে দেখা যায়। তবে মহিলাদের মধ্যে এই রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়, যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. ব্যাপক ব্যথা
ফাইব্রোমায়ালজিয়ার প্রধান লক্ষণ হলো শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ব্যথা। এই ব্যথা সাধারণত গলা, ঘাড়, কাঁধ, কোমর, এবং পায়ের পেশীতে বেশি অনুভূত হয়। মহিলাদের মধ্যে এই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং দিনে বা রাতে অনেক সময় তীব্র হতে পারে।
২. ক্লান্তি বা অতিরিক্ত ক্লান্তি
ফাইব্রোমায়ালজিয়ায় আক্রান্ত মহিলারা সাধারণত অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ করেন, যদিও তারা পর্যাপ্ত ঘুম গ্রহণ করে থাকেন। ঘুমের পরে শরীর সম্পূর্ণরূপে বিশ্রাম পায় না এবং তারা সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করেন, যা দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. ঘুমের সমস্যা
মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রোমায়ালজিয়ার আরও একটি সাধারণ লক্ষণ হলো ঘুমের সমস্যা। অনেক মহিলাই অনিদ্রা, ঘন ঘন ঘুম থেকে জেগে ওঠা, এবং পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে মানসিক অবসাদ বোধ করেন।
৪. মস্তিষ্কের ধূম্রভাব (Fibro Fog)
ফাইব্রোমায়ালজিয়ার কারণে মহিলাদের মস্তিষ্কে “ফাইব্রো ফগ” নামে একটি অবস্থা তৈরি হয়, যার ফলে স্মৃতি বিভ্রাট, মনোযোগের ঘাটতি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমস্যা দেখা যায়। এটি তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. সংবেদনশীল ত্বক
ফাইব্রোমায়ালজিয়ায় আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে ত্বকের সংবেদনশীলতা বেশি থাকে। ত্বকের হালকা স্পর্শও ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে এবং অনেক সময় তারা কাপড় পরা বা চাদর ব্যবহারেও অস্বস্তি বোধ করেন।
৬. গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা
এই রোগের আরেকটি লক্ষণ হলো পাচনতন্ত্রের সমস্যা, যা অন্তর্ভুক্ত করে ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS)। মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রোমায়ালজিয়া থাকলে পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
৭. মাথাব্যথা
ফাইব্রোমায়ালজিয়া রোগীরা প্রায়শই মাইগ্রেন বা নিয়মিত মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন। মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা অত্যন্ত সাধারণ এবং এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৮. মনোভাবের পরিবর্তন
ফাইব্রোমায়ালজিয়ার কারণে মহিলারা মানসিক সমস্যায়ও ভুগতে পারেন, যেমন উদ্বেগ, হতাশা এবং অস্থিরতা। এই রোগ মানসিক চাপ বৃদ্ধি করতে পারে এবং এটি তাদের মানসিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলে।
ফাইব্রোমায়ালজিয়ার কারণ
যদিও ফাইব্রোমায়ালজিয়ার সঠিক কারণ জানা যায়নি, কিছু বিষয়কে এর প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
- স্নায়ু সংবেদনশীলতা: অনেক সময় নার্ভের অস্বাভাবিক কার্যক্রম এই ব্যথার প্রধান কারণ হতে পারে।
- জেনেটিক ফ্যাক্টর: পরিবারে ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ইতিহাস থাকলে এর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- হরমোনজনিত পরিবর্তন: মহিলাদের মধ্যে হরমোনের পরিবর্তন যেমন ঋতুচক্র বা মেনোপজ ফাইব্রোমায়ালজিয়ার লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
- মানসিক চাপ: মানসিক চাপ ও উদ্বেগ ফাইব্রোমায়ালজিয়ার একটি বড় কারণ হতে পারে। উচ্চ মাত্রার মানসিক চাপ এই রোগের লক্ষণগুলিকে আরও তীব্র করে তোলে।
মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ঝুঁকি
মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি। এটি ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে সাধারণত বেশি দেখা যায়। মহিলাদের মধ্যে হরমোনজনিত পরিবর্তন, মানসিক চাপ এবং দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক পরিশ্রম এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
উপসংহার
মহিলাদের মধ্যে ফাইব্রোমায়ালজিয়া একটি জটিল রোগ, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মিত জীবনযাপনের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
NHC Trust যেকোনো ব্যথাই আক্রান্ত মানুষকে দ্রুত ব্যথা মুক্ত স্বনির্ভর জীবনের পথে নিয়ে যেতে সামর্থ্যের মধ্যেই অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি ও বায়ো ফিজিক্যাল থেরাপি ব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকে।
যোগাযোগ : 01931405986, 01910701955
অথবা ভিজিট করুনঃ https://www.nhctrust.org/contact-us/